আনন্দধারা
-অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
প্রসব বেদনায় ছটপট করছে কমলা। ছোট ছেলেটা কাঁদছে । ভাত চায় ভাত। চালটা ফুটে উঠলেই হবে গরম ভাত । আর একটু ধৈর্য্য । নিজের যন্ত্রনাটুকু পেট চেপে ধরে আছে । বড়টা মাঠে । এখনো বাড়ি ফেরেনি । পোয়াতি গাভীটা ও কমলার করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রোদে শুয়ে এখন । সব ভাবনা কমলার ।
কি করবে কমলা? আর যে সইতে পারছে না । বড় ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে হবে । খুঁজেই পাচ্ছে না । আরও একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে । ততক্ষনে খবর পেয়েছে পাড়ার দাইমা । হ্যালা,মাগী এবারেরটাকেও খাবি নাকি ? কি ভেবেছিস শুনি? চল্ আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ।
-কি করব জ্যাঠি মা। সব একটু গুছিয়ে নিয়ে একাই চলে যাব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে । ঠিক সইতে পারব গো ।
-খুব হয়েছে, কত করে বারণ করলাম, এবার ওষুধ খা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে শরীরটা ভালো করে দেখা । শুনলি না? মেয়ে নেবার বড্ড সখ তাই না?
-না গো দাইমা, ওর বাপের মেয়ে নেওয়ার বড্ড সখ। দুটো ছেলে। এবার নিশ্চয় মেয়ে হবে। একটু কষ্ট হচ্ছে। সব ঠিক হয়ে যাবে৷ তাই না দাইমা?
দাইমা, মুখ বাঁকিয়ে বললো, অভাবের সংসার তবু সখ ষোলোয়ানা ।
কমলা হাসতে হাসতে বলল, বরকে বড্ড ভালোবাসি গো। আবদার করে মেয়ে চেয়েছে । আর আমি দেব না ?
-আর যদি না হয়, কি করবি?
-কত মান্যত করেছি গো দিদি । উপোষ ব্রত সব । ঠাকুর এবার ঠিক সহায় হবে গো।
কমলা এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেডে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে অপেক্ষায় । একটা কান্নার রোল শোনার জন্য । দুই ছেলে কেঁদেই চলেছে মায়ের জন্য। গোধূলি লগ্নে শঙ্খ ধ্বনি বেজে উঠল । ঠিক তখনই শোনা গেল কান্নার আওয়াজ । আনন্দে আত্মহারা কমলার স্বামী।
দাইমার কোলে কমলার মেয়ে । কিন্তু কমলা ? দাইমা চোখ মুছতে মুছতে মেয়েকে দেখিয়ে বলল, এই নে তোর লক্ষ্মী। লক্ষ্মী হারিয়ে লক্ষ্মী পেলি। খুশি তো?
বরের চোখে আনন্দধারা ।